আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি বাতিলে এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে ফিলিস্তিন। মার্কিন সিদ্ধান্ত রুখতে সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে তোলা একটি প্রস্তাবে ওয়াশিংটন ভোটো দেয়ায় সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। তবে পরিষদের অন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সমর্থন পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি। এদিকে, ফিলিস্তিনিদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের জেরুজালেম সফর স্থগিত করা হয়েছে।
জেরুজালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাতিলে নিরাপত্তা পরিষদে মিশরের উত্থাপিত প্রস্তাবের ওপর সোমবার ভোটাভুটি হয়। পনের সদস্যরাষ্ট্রের ১৪টিই এর পক্ষে ভোট দিলেও, ভেটো ক্ষমতা সম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতায় তা বাতিল হয়ে যায়। ভোটাভুটি শেষে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেরুজালেম নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানালেও, এর সমালোচনা করেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি।
জাতিসংঘে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ রিকরফ্ট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেযার পর ওই অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ প্রস্তাবের তোয়াক্কা না করেই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। শান্তি প্রকিওয়ায় এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।’
জাতিসংঘে ফরাসি রাষ্ট্রদূত ফ্রাঁসোয়া দেলাতরে বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের সব রাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় রাখার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রতিষ্ঠায় দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। আশা করি ট্রাম্প প্রশাসন চলমান সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত পদক্ষেপে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।’
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেন, ‘আজ নিরাপত্তা পরিষদে যা হলো, তা অপমানজনক। এটা ভুলে যাওয়ার মতো নয়। এর দ্বারা আবারও প্রমাণিত হলো যে, জাতিসংঘ ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্কটকে আরও জটিল করে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্র কোথায় তাদের দূতাবাস রাখবে আর কোথায় রাখবে না সেবিষয়ে বাইরের কারও কথা বলার অধিকার নেই।’
গাজায় রকেট হামলা ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দখলদারিত্বের মতো ইসরাইলে বিভিন্ন আগ্রাসী কর্মকাণ্ডকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়ে যাওয়ায়, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর তোপের মুখে পড়েন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। জেরুজালেম নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থানকে ‘ঐতিহাসিক পাপ’ আখ্যা দিয়ে অবৈধ ও ভুল সিদ্ধান্ত শুধরানোর সুযোগ পেয়েও যুক্তরাষ্ট্র তা হেলায় হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর। বিষয়টি নিয়ে ভোটাভুটিতে বেশির ভাগ দেশের সমর্থন পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এর পরপরই সোমবার গভীর রাতে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি বাতিলে সাধারণ পরিষদের জরুরি বৈঠকের ডাক দেন ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব বাতিল হয়েছে, সেই প্রস্তাবই সাধারণ পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিলো যে, যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিতে পারে। তাই হয়েছে। এ জন্যই আমরা আগ থেকেই জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি বাতিলে সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপনের পরিকল্পনা করে রেখেছি। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একক ভেটো কোনো কাজে আসবে না।’
নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাবে ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন ৫টি দেশের যে কোনো একটি বিরোধিতা করতে তা বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু সাধারণ পরিষদের ১শ’ ৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি দেশ কোনো প্রস্তাবের সমর্থন দিলেই তা পাস হয়। সেক্ষেত্রে সাধারণ পরিষদে জেরুজালেম নিয়ে মার্কিন একক সিদ্ধান্ত বাতিলে কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে, ফিলিস্তিনের পক্ষেই রায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু বৈঠকের দিনক্ষণ সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।
এদিকে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের আসন্ন জেরুজালেম সফরের বিরোধিতা করে পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছে শতশত ফিলিস্তিনি। এর মধ্যেই সোমবার পেন্সের পূর্বপরিকল্পিত মধ্যপ্রাচ্য সফর স্থগিতের ঘোষণা দেয় হোয়াইট হাউস। কবে নাগাদ তিনি জেরুজালেম সফরে যাবেন তার নতুন তারিখ এখনো জানানো হয়নি।